ই-কমার্স বলতে এক কথায় অনলাইনে কেনাকাটাকে বুঝায়। ইলেকট্রনিক কমার্স বা ইন্টারনেট কমার্স হচ্ছে এর পূর্ণ রুপ। ই-কমার্সের মূল কন্সেপটাই হচ্ছে অনলাইনে লেনদেন। এবার এই লেনদেন হতে পারে কোন পন্যের বিনিময়ে আবার হতে পারে কোন সেবার বিনিময়ে।

বর্তমানে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অগ্রগতির সুবাদে একজন পাইকারী বিক্রেতার কাছ থেকে তার পন্য একজন ক্রেতারা কাছে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সকল কাজ অনলাইনেই সেরে ফেলা সম্ভব। এরই ধারাবাহিকতায় ই-কমার্স ব্যাবসার সাথে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ড্রপ শিপিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মত বেশ লাভজনক ব্যাবসা। ই-কমার্সের ৮/১০ টা ধরন আছে। জানতে ক্লিক করুন 👉 এখানে

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স ওয়েবসাইট হচ্ছে https://www.amazon.com/ আর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ই-কমার্স ওয়েবসাইট হচ্ছে https://www.daraz.com.bd/ (উল্লেখ্য যে দারাজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সাইট হলেও তাদের সেবার মান এত একটা ভালোনা। বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে ই-কমার্সের চেয়ে এফ-কমার্স অনেক এগিয়ে এবং অনেক বেশি জনপ্রিয়।

আসুন একটা উদাহরনের মাধ্যমে ই-কমার্স বিষয়ের পুরো আদ্যোপান্ত জেনে নেই।

উদাহরণস্বরূপ আমরা যেকোন শপিংমল, পাইকারী বাজার/খুচরা বাজারকে একটা ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সাথে তুলনা করতে পারি। তবে বুঝার সুবিদার্থে আমরা একটা দোকানকেই আগে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি।

একটা দোকানের যেমন একটা নাম থাকে তেমনি একটা ওয়েবসাইটেরও নাম থাকে, যাকে বলা হয় ডোমেইন। আবার এই দোকানটা যেমন ভূপৃষ্ঠের একটা স্থান দখল করে আছে, যেখানে পন্যগুলো সাজানো হয়, তেমনি একটা ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট রাখার জন্য একটা হোস্টিং এর প্রয়োজন হয়।

দোকানের যেমন মাসে মাসে ভাড়া দিতে হয়, তেমনি হোস্টিং এরও। তবে ডোমেইন কিনতে এককালীন ১ বছরের জন্য টাকা প্রদান করতে হয়।

দোকানের যেমন মালিক থাকে তেমনি ওয়েবসাইটের মালিককে বলা হয় আডমিন বা ওউনার। এবং এই দোকানের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য ব্যাক্তিবর্গদের ওয়েবসাইটের ভাষায় বলা হয় User Role.

একটা দোকানে অনেকে অনেক কিছু কিনতে আসেন।  আবার অনেকে এমনিতেই ঘুরতে আসেন। তেমনি একটা ওয়েবসাইটে যারাই আসবে তাদেরকে ভিজিটর বা ট্রাফিক বলে। আর যারা কিনতে আসবে তাদের বলা হয় কাস্টমার বা লীড।

ভিজিটরদের কাস্টমারে রুপান্তর করার অনেক সুন্দর সুন্দর পদ্ধতি রয়েছে যেমন লীড জেনারেশন। মার্কেটিং এর ভাষায় কোল্ড, ওয়ার্ম এবং হট এই তিন জাতের কাস্টমারের কথা বলা হয়। বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন 👉 এখানে

ধরুন, আপনি এক জোড়া জুতা কিনতে একটা জুতার দোকানে ঢুকলেন। দোকানে ঢুকতেই আপনাকে একজন সালাম দিল এবং জিজ্ঞেস করল যে আপনি কি ধরনের জুতা খুজছেন বা কোন ধরনের জুতা আপনার পছন্দ? ইত্যাদি..

যে একজন আপনাকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসল এটা হচ্ছে একটা ওয়েবসাইটের লাইভ চ্যাট। এই লাইভ চ্যাটের বটের কাছে আপনি যে সমস্ত তথ্য দিয়ে রাখবেন কোন ভিজিটর ওয়েবসাইটে ঢুকামাত্র সে সেগুলো শো করবে। আর এমন তথ্য যা তার কাছে নেই সেসবের জন্য ভিজিটরদের সরাসরি সাইটের এডমিনের কাছে ট্রান্সফার করে দিবে।

দোকানে সারি সারি জুতা সাজানো। প্রথম সারির জুতাগুলি আপনার বেশ ভালোই লাগছে। কিন্তু দামে প্রচুর। খেয়াল করে দেখলেন ভিতরে আরো অনেকগুলা জুতার সারি রয়েছে। বিভিন্ন বয়সের – বিভিন্ন সাইজের এবং বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা ভিন্ন ভিন্ন তাকে সাজানো।

এই প্রথম সারির জুতাগুলা হচ্ছে ফিচার্ড প্রোডাক্ট (যে সমস্ত প্রোডাক্ট স্পেশাল)।  অনেকে আবার সবচেয়ে বেশি বিক্রিত প্রোডাক্টও এই জায়গায় রাখে, যাদের বলা হয় টপ সেল প্রোডাক্ট। এই দুটারই আলাদা আলাদা সুবিধা রয়েছে। বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে 👉 এখানে

যেই যায়গায় প্রোডাক্ট ফিচারিং করা হয় তাকে বলা হয় ওয়েবসাইটের হিরো এরিয়া বা অনেকে হিরো এরিয়ার পরের সেকশনেও প্রোডাক্ট ফিচারিং করে। এছাড়াও প্রোমোশনাল ব্যানার স্লাইডার দিয়েও প্রোডাক্ট ফিচারিং করা যায়।

alibaba.com থেকে একটি প্রোমোশনাল ব্যানার এড স্লাইডার

প্রসংগক্রমে আরেকটা টার্ম স্কিপ করে এসেছি, কারন আগে বললে অনেকের বুঝতে কষ্ট হবে। সেটা হচ্ছে, ওয়েবসাইটে ঢুকতেই আপনার চোখে যতটুকু এরিয়া কেচ হয়েছে সেটাকে বলা হয় এবভ দ্যা ফোল্ড। এই এবভ দ্যা ফোল্ডে কি কি জিনিস রাখতে হয় সেটা নিয়ে বিস্তারিত লিখা আছে 👉 এখানে। এছাড়াও ডেভেলপারদের জন্য ভিউপোর্ট সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারনা দেয়া হয়েছে 👉 এখানে

এই জুতার দোকানে অবশেষে আপনার একটা জুতা মোটামুটি পছন্দ হলো। সেলসম্যান আপনাকে একই রকম দেখতে আরো কিছু জুতা দেখালো। আপনি সেখান থেকে একটা পছন্দ করলেন।

সেলসম্যান আপনাকে যেগুলো দেখালো সেগুলো হচ্ছে রিলেটেড প্রোডাক্ট

alibaba.com থেকে একটি রিলেটেড প্রোডাক্টের উদাহরণ দেয়া হল

সেলস ম্যান আপনাকে বলল এই জুতাটা ভালো এবং সুন্দর কিন্তু এর চেয়ে আর একটু দাম বাড়ালেই আরো সুন্দর এবং আরো ভালো মানের জুতা পাওয়া যাবে। এই বলে আপনাকে অন্য একটা জুতার তাকে নিয়ে গেলেন। সেখানে আপনার অন্য আরেকটি জুতা পছন্দ হয়েছে ঠিকই কিন্তু আপনার বাজেটের চেয়ে বেশি দাম হওয়ায় আপনি চিন্তা করলেন সামনের ঈদ বোনাসে এমন একটা জুতা কিনে নিবেন।

আপনার কাংখিত পন্যের চেয়ে আরেকটু ভালো মানের পন্যগুলিকে বলা হচ্ছে আপসেল প্রোডাক্ট

এখন আপনি কাউন্টারে টাকা দিচ্ছেন আর ওদিকে আপনার জুতা প্যাকেটিং হচ্ছে এমন সময় খেয়াল করলেন কাউন্টারের পাশেই জুতার কালি, মোজা ইত্যাদি সাজানো। আপনি ভাবলেন আপনার পড়নের জুতাটা পুরাতন হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে কালি লাগানো লাগে। তাই একটা জুতার কালি এবং নতুন জুতার জন্য এক জোড়া মোজাও কিনে নিলেন।

আপনার কাংখিত পণ্যের চেয়ে আরেকটু ভালো মানের পণ্য গুলোকে বলা হচ্ছে আপসেল প্রোডাক্ট

এখন আপনি কাউন্টারে টাকা দিচ্ছেন আর ওদিকে আপনার জুতা প্যাকিং হচ্ছে এমন সময় খেয়াল করলেন কাউন্টারের পাশেই জুতার কালি, মোজা ইত্যাদি সাজানো। আপনি ভাবলেন আপনার পরনের জুতাটা পুরাতন হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে কালি লাগানো লাগে। তাই একটা জুতার কালি এবং নতুন জুতার জন্য এক জোড়া মোজা কিনে নিলেন।

আপনার কাংখিত পণ্যের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য প্রোডাক্ট গুলোকে বলা হচ্ছে ক্রস সেল প্রোডাক্ট। ক্রস সেল প্রোডাক্টসের সাথে অনেকে রিলেটেড প্রোডাক্ট গুলিয়ে ফেলেন। তাই আরেকটা উদাহরণ দেই যেমন, আপনি মোবাইল কিনলেন। সেক্ষেত্রে আপনার ক্রস সেল প্রোডাক্টগুলো হবে হেডফোন, চার্জার, ইত্যাদি।

বোনাস হিসেবে জেনে নিন 👇

কেন সুপার মার্কেটের ক্যাশ কাউন্টারের পাশে চকলেট এবং কোল্ড ড্রিংকস সাজিয়ে রাখে?

উপরুক্ত বিষয় ছাড়াও আরো অনেক কিছু একটা ই-কমার্স ওয়েবসাইটে দেয়ার আছে। যেমনঃ কাস্টমার রিভিউ, ডিস্কাউন্ট, কুপন, ইত্যাদি। পরবর্তীতে এগুলো কাভার করা হবে ইনশাল্লাহ।

এই আর্টিকেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন টপিক, একটা ই-কমার্স ওয়েবসাইটের পেমেন্ট সিস্টেম নিয়েই আলোচনা বাকি রয়ে গেছে…


আরো পড়ুন 👇